নরমাল ডেলিভারি বনাম সার্জারি
গত কয়েক দিন আগে আমার এক আত্মীয়ের ( ডাঃ দম্পতির ) দ্বিতীয় সন্তান, ছেলে, হয়েছে, আলহামদুল্লিয়াহ। বাক্তিগত বা পারিবারিক খুশির সংবাদ দেওয়া নয় বরঞ্চ একটা বা কয়েকটি বিষয় শেয়ার করতে চাই। ঐ সময়টাতে আমার সাথে অনেকক্ষণ তাদের আগত সন্তানের ডেলিভারি সম্পর্কে কথা হয়। তারা দুইজনই ডাক্তার, আমিই তাদের কথা বেশি শুনি, সাথে অস্ট্রেলিয়ার সিস্টেম সম্পর্কে যা জানি তা শেয়ার করি। বোঝা গেল যে, তাদের নরমাল ডেলিভারির প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পারিপার্শ্বিকতা অনুকূলে নয়। প্রথমত, কোন gynecologist এই বিষয়ে আগ্রহী নয় বরঞ্চ নিরসুতাহিত করার কোন কমতি নেই। ডাক্তারদের মধ্যে এমন মনোভাব তৈরি হবার অনেক কারণ থাকতে পারে যেমনঃ নরমাল ডেলিভারিতে কম টাকা আয়, অনেক বেশি সময় দেওয়া লাগে যা তাদের নাই অথবা দুই একটি ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারির ইচ্ছা থাকলেও, অনেক দিন ধরে নরমাল ডেলিভারি না করানোর কারণে এই expertise এ মরিচা পরা ফলে নরমাল ডেলিভারির সম্পূর্ণ কাজটি নিরাপদে সম্পন্ন করার confidence না থাকা।
অস্ট্রেলিয়ার একটি ঘটনা বলি, এটি আমার বন্ধুর ওর তার সহধর্মিণীর, সবাই বাংলাদেশী। আমার বন্ধুর প্রথম বাচ্চা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার হসপিটালে। প্রসব বেদনা নিয়ে দুইদিন যাবত ভাবী হসপিটালে আছে, ডেলিভারির কোন লক্ষণ নাই। আমরা ত পেরেশান কিন্তু হসপিটালের লোকজন কেমন যেন অন্যরকম কোন গা করছেনা। এদিকে বাংলাদেশ থেকে খবর নেওয়ার জন্য বার বার আমার বন্ধুকে ফোন করছে, বিশেষ করে ভাবীর পক্ষের আত্মীয়রা বার বার আপডেট জানতে চাচ্ছে , এটাই হওয়ার কথা, কাম্য। আমি আমার বন্ধুর সাথে সাথে আছি সবসময়, তার মনের অবস্থাটা অনুভব করতে পারছি কিছুটা।আমার তরফ থেকে সাধ্যমত সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছি। বিষয়টা এমন পর্যায়ে দাঁড়াল যে বাংলাদেশী আত্মীয়রা বন্ধুকে বলছে সে যেন ডাক্তারকে বলে আর অপেক্ষা না করতে বরঞ্চ ডাক্তার যেন তাড়াতাড়ি সার্জারি করে। বাচ্চা প্রসবের দেরী দেখে বন্ধুটি ডাক্তারকে সার্জারির কথা কয়েকবার বলেছে কিন্তু ডাক্তার কিছুতেই অনুরুধ রাখছে না। ডাক্তারের স্পষ্ট জবাব, সার্জারির দরকার হলে আমরা করব, কিন্তু এখনো এমন কোন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে সার্জারি করতে হবে। আমরা নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করছি। বেচারা বন্ধু, না পারছে ডাক্তার কে বোঝাতে, না পারছে আত্মীয়দেরকে বুঝাতে। খুব মায়া লাগছিল বন্ধুটির জন্য, সাথে সাথে অবাক লাগছিল এই ভেবে যে দুই দেশের মানুষের চিন্তার মধ্যে কত ফারাক।
কেন এমন ফারাক, কারণ আছে নিশ্চয়ই, খুব আগ্রহ নিয়ে আরও গভীর ভাবে ব্যাপারটি বোঝার চেষ্টা করলাম। নরমাল ডেলিভারি করানোর জন্য কিধরণের সাপোর্ট থাকা দরকার? প্রথমত, দক্ষতাগত, এই বিষয়ে দক্ষ স্বাস্থ্য কর্মী পর্যাপ্ত থাকতে হবে। স্বাস্থ্য কর্মী বলতে, ডাক্তার, নার্স, ও তাদের সহযোগীদেরকে ধরছি। দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তিগত প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি। আর সবচেয়ে বেশি দরকার এইটা বোঝতে পারা যে নরমাল ডেলিভারি জীবনের জন্য নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত ও স্বাভাবিক। তাছাড়া, নরমাল দেলিভেরির জন্য অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে অনেক সময় ধরে মনিটর করতে হয়। এই কাজটি একজন ডাক্তারের পক্ষে সম্ভব নয়, এত পরিমাণে ডাক্তারও নাই আর তাছাড়া এটি তার কাজও নয়। তাহলে এই বিষয়টি উন্নত দেশে কিভাবে সামাল দিচ্ছে। এইখানেই আমাদের দেশের সাথে উন্নত বিশ্বের তফাৎ। প্রযুক্তিগত বিষয় বাদ দিলে, এই ক্ষেত্রটায় তারা অবশ্যই অনেক বেশি এগিয়ে আমাদের চেয়ে। সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টা আমি মনে করি, এইখানে নার্সরা অনেক বেশি প্রশিক্ষিত, নরমাল ডেলিভারিতে তাদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ফলে পুরু বিষয়টি তারা সামগ্রিবভাবে ডাক্তারের পরামর্শক্রমে ভালভাবে দেখাশুনা করতে পারে। আমার মনেহয় এটি সবচেয়ে বিবেচিত কারণ হওয়া উচিত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। ডাক্তারদের সহযোগিতার পাশাপাশি, যতক্ষণ না নার্সদেরকে ব্যাপকভাবে এই কাজে দক্ষতার সাথে যুক্ত করতে পারব, সহসা এই সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া কঠিন বলে মনে হচ্ছে।
Dr. M Obayed Ullah, University of Adelaide, North South University
Comments Area