গর্ভবতী মায়েদের সিজার অপারেশনঃ বাংলাদেশে ও বাস্তবতা


বাংলাদেশে সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারির চেয়ে সিজারিয়ান সেকশন অপারেশন বেশি হয় বলে তথাকথিত অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ডেলিভারির শতকরা ৩১ ভাগ সিজারের মাধ্যমে হয়।অনেকেই মনে করেন সিজার করা হয় টাকার জন্য। বাংলাদেশে সিজার কেনো বেশি হয় সে সম্পর্কে জানার আগে গত ১০ বছরে মাতৃমৃত্যু বা গর্ভ ও সন্তান জন্মদান সংক্রান্ত জটিলতায় মায়ের মৃত্যুর হার সম্পর্কে জেনে নিই। গত দশ বছরে এই হার কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। গত ২৫ বছরে এর হার কমেছে ৭০ শতাংশ।গত ১০ বছর আগেও সন্তান জন্মদানের সময় মারা গেছে এমন আমাদের আশে পাশে হরহামেশা দেখা যেত।আমরা আমাদের গ্রামের ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করলে দেখবেন যে আগে এই হার যে পরিমাণ ছিলো বর্তমানে খুব কম শোনা যায় যে অমুক মা বাচ্চা দিতে গিয়ে মারা গেছেন।এই মাতৃমৃত্যুর হার কমানোর পিছনে এক বিশাল ভূমিকা রয়েছে সিজারিয়ান ডেলিভারির।

এখন আমরা একটু জানার চেষ্টা করি কোন পরিপ্রেক্ষিতে একজন ডাক্তার সিজার করতে বাধ্য হয়। 
১.মায়ের উচ্চ রক্তচাপ, খিঁচুনী যাকে বলে এক্লাম্পসিয়া।এই অবস্থায় গর্ভাবস্থা চালিয়ে গেলে তা মা এবং বাচ্চা উভয়ের জীবনই ঝুঁকিতে ফেলতেপারে। তাই ডাক্তার ডেলিভারির ডেটের আগেই সিজার করতে পারেন।

২.যদি মায়ের যোনী সরু হয় এবং বাচ্চার মাথার স্থানসংকুলান না করতে পারে তবে যোনিপথে বাচ্চা প্রসব করা অসম্ভব হতে পারে। এমতাবস্তায় স্বাভাবিক প্রসব করার চেষ্টা করাও মা ও শিশুরজন্য ঝুঁকি হতে পারে।

৩.ডেলিভারি সসময় মায়ের জরায়ুতে বাচ্চারঅবস্থা সিজার নির্ধারণের জন্য খুব ইম্পরট্যান্ট। মায়ের জরায়ুর মধ্যে বাচ্চা সাধারণত যোনিমুখের দিকে মাথা থাকে,মাথা আগে আসে পরে শরীর আসে।কিন্ত বাচ্চার নিতম্বের অংশ যোনিমুখের দিকে থাকে অর্থাৎ যদি বাচ্চা যদি উলটে থাকে স্বাভাবিক প্রসবে মায়ের যোনিতে ক্ষত হবার সম্ভাবনা থাকে এমনকি প্রসবের এক পর্যায়ে বাচ্চার মাথা আটকে যেতে পারে।বাচ্চা এবং মা উভয়ের জন্য বিপদজনক হতে পারে।এমতাবস্থায় সিজার ছাড়া উপায় নেই।গ্রামে গঞ্জে যত শিশু জন্মের সময় মারা যায় তার অনেকাংশে এই কারনে।

৪.প্লাসেন্টাপ্রিভিয়া (ফুল নিচের দিকে থাকলে। যখন গর্ভফুল জরায়ুর নিচের দিকে অর্থাৎজরায়ুমুখের কাছে থাকে তখন তা বাচ্চা প্রসবে বাধা সৃষ্টি করে।

৫. ডায়েবেটিক মায়েদের বাচ্চা বড় হয় সে ক্ষেত্রে সিজার প্রয়োজন হতে পারে।নয়তো বাচ্চা যোনিপথে আটকে যেতে পারে।

৬.এছাড়াও মায়ের বিভিন্ন রোগে যেমন কোনও কোনও ইনফেকশন যোনি থেকে সংক্রমিত হয়। তাই এসব ক্ষেত্রে সিজার করলে মা থেকে বাচ্চার শরীরে রোগ সংক্রমন প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেমন- যৌন হার্পিস, যৌনরোগ। মায়ের কোনও সমস্যা যেমন- হার্টের অসুখ থাকলে স্বাভাবিক প্রসবের ধকল এড়াতে সিজার করা যেতে পারে।এরকম আরো অনেক কারন আছে যে ক্ষেত্রে সারা পৃথিবীর যে কোন ডাক্তারকে সিজারের ডিসিশন নিতে বাধ্য হতে হয়।

এখন আমরা জেনে নেই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কেন এই প্রবলেম গুলো তৈরি হয়?কিসের জন্য বাংলাদেশে সিজারের হার বাড়ছে?

প্রথমত, গর্ভকালীন মায়ের যে পরিমাণ যত্ন নেয়া দরকার তা নেয়া হয় না। WHO এর নিয়ম অনুসারে গর্ভকালীন একজন মায়ের ১৪ বার চিকিৎসকের কাছে এসে চেক আপ করা উচিত।কমপক্ষে চার বার করতেই হবে।যা বাংলাদেশে একেবারেই হয় না বললেই চলে।।এদেশের গ্রামে গঞ্জে এমনকি শহরেও গর্ভকালীন পরিচর্যা বলতে কিছু আছে এটাই মানুষ জানে না।গর্ভকালীন অবস্থায়ও ভারি ওজন বহন,ভারি কাজ করতে থাকে। এর ফলে প্রসবের জন্য ডাক্তারের কাছে আসে হাই রিস্ক অবস্থায়। সিজার করানো ছাড়া উপায় থাকে না।

দ্বিতীয়ত, আমাদের উচ্চমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত নারীরা এবং কর্মজীবী মায়েরা ডেলিভারির পেইন সহ্য করতে রাজি না। অনেক সময়েই ডেলিভারির পেইন অল্প শুরু হওয়ার পরেই মায়েরা অনুরোধ করে সিজার করার জন্য। বাঙালি আরাম প্রিয় জাতি,ডেলিভারির কষ্ট থেকে মুক্তি পেতেও অনেক মা স্বেচ্ছায় সিজারকে বেছে নেন।

তাছাড়া নর্মাল ডেলিভারিতে নবজাতক এবং মায়ের মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে।যত এক্সপার্ট ডাক্তার হোক না কেনো।তাই যারা বিন্দুমাত্র ঝুকি নিতে রাজি নন তারা সিজারকেই বেছে নেন।

ক্লিনিক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য। বাংলাদেশে এই অহেতুক সিজার যে কয়টি হয়ে তার অনেকাংশে হয় এই কারনে।বাংলাদেশে রোগীরা মনে করে ক্লিনিক এর মালিকও ডাক্তার। কিন্ত বাস্তবতা হলো ক্লিনিক গুলোর মালিক পক্ষে ডাক্তারের তুলনায় ব্যবসায়ী থাকে। গ্রামে গঞ্জে থেকে দালাল রোগী ধরে ক্লিনিকে এনে রাখে।ক্লিনিক মালিকের চাপে ডাক্তার সিজার করতে বাধ্য হয়।

ডাক্তারদের সময়ের অভাব।বাংলাদেশে ডাক্তারদের প্রচুর রোগী দেখতে হয় বিশেষ করে খ্যাতিমান ডাক্তারদের পিছনে রোগীরাই লাইন ধরে থাকে।ফলে একটা নরমাল ডেলিভারিতে যে সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয় ব্যস্ততার জন্য সেটা করা পসিবল না।

ষষ্ঠত, জাতিগতভাবে আমাদের এই অঞ্চলের মায়েদের short stature narrow pelvis বেশি থাকে। তাই অবস্ট্রাক্টেড লেবারের হার এই অঞ্চলে বেশি। এবং আগের দিনে অত্যধিক প্রসূতি মমায়ের মারা যাওয়ার অন্যতম কারন এটি।এ জন্য তুলনামূলকভাবে বেশি সিজার দরকার সুতরাং শুধু মাত্র গাইনিকলজিস্টের লোভের জন্যই যে সিজারের পরিমান বেশি তা নয়, সিজারের বেশি হওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট কারন আছে।তবে কিছু ডাক্তার যে লোভের জন্য করেন না,সেটা অস্বীকার করা যাবে না।ডাক্তাররা এদেশের মানুষ।এদেশের অন্য সকল পেশার মানুষের মতই এখানেও কেউ কেউ লোভের জন্য করতে পারেন সেক্ষেত্রে রোগীদের তাদের এভয়েড করা পসিবল। এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন।

সুতরাং সিজারের এই হার বৃদ্ধির কারনের একমাত্র চিকিৎসককেই দায়ী করলে সমাধান কোনো ভাবেই পসিবল না।গাইনোকলজিস্ট বা চিকিৎসকের যেমন সৎ হতে হবে তেমনি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের মেয়েদের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।মেয়েরা অনেক সময় লজ্জায় বা যে কোনো কারনে অসুখ গোপন রাখতে চেষ্টা করে,এসব ট্যাবু ভেংগে নারীর এবং গর্ভবতী মায়ের পরিচর্যা না করলে সুস্থ মা ও সুস্থ শিশু পাওয়া সম্ভব নয়।শুধুমাত্র অন্য দেশের সাথে চিকিৎসার তুলনা না করে অন্য দেশের সাথে আমাদের স্বাস্থ্য, হাইজিন,আমাদের শারীরিক কাঠামো,আমাদের জাতীয় সমস্যা তুলনা করে আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা,গর্ভকালীন পরিচর্যা, গর্ভকালীন সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন বাড়ালে সিজারের এই হার নিয়ন্ত্রণ করা পসিবল হবে।।

Abdul Aziz Rixwan, Sylhet MAG Osmani Medical College


Category : Health, Woman Health, Diseases
Tag : Woman, Child Birth, Normal Delivery
Published By Published On August, 19 2018 @ 05:17
Share In

Comments Area

  • M Obayed Ullah

    '

    it is an interesting article

    '


You can write a bolg as well. Please join and start writing now   Write a blog

Back To Blog Page

Please do not use this service during emergency.

Join Medicare 24

Register as patient ?

  • Online Doctor Appointment, Prescription and Diagnostic Reports.
  • Store Medical History (Prescriptions, Diagnostic Reports and more).
  • Reminder on Doctor Appointment.
  • Manage Family Members.

Register as doctor?

  • Manage Patient Appointment.
  • Write Prescription & Diagnostic Advice.
  • Manage Chamber.
  • Manage Assistant & Staff.

Register as hospital?

  • Manage Diagosistic Orders & Online Report Delivery.
  • Manage Doctors and Appointments.
  • Manage Outdoor Patients.
  • Promote Hospital/Diagnostic Centre Online.

Register as pharmacy?

  • Manage online order.
  • Manage Sales and Inventory
  • Manage Customers.
  • Manage Store and Staff.

Looking for a Specialist